১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। দিনটি
বাঙ্গালি ও বাংলা ভাষাভাষী প্রতিটি জাতির জন্য অনেক গর্বের। দিনটিকে আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার চক্রান্ত শুরু
করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিরা। আর এই চক্রান্তকে নির্মূল করার জন্য ১৯৪৭ সালের
নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় ভাষা বিক্ষোভ। ১৯৪৮ সালেও এ নিয়ে আন্দোলন
হয়েছিলো। তবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ব্যাপারটি চরম রুপ ধারণ করে। মাতৃভাষা
বাংলাকে রক্ষা করতে সেদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে বাংলার দামাল
ছেলেরা।আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় তৎকালীন পুলিশ বাহিনী। আর এই
গুলিবর্ষণে প্রাণ হারায় রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকত ও নাম না জানা অনেক
ছাত্র-ছাত্রী সহ সাধারন মানুষ। এই অমানুষিক হত্যার প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি আবার
জমায়েত হয় ছাত্র-ছাত্রী আর সাধারন মানুষ । ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতেই সবাই মিলে একটি
স্তম্ভ তৈরী করেন যা ২৬ ফেব্রুয়ারি গুড়িয়ে দেয় সরকার। ২১ ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য
দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরো বেগবান হয়।১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট
জয়লাভ করলে ৭মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনার প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে আবেদন করেন
কানাডায় বসবাসরত দুইজন বাঙ্গালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম। অবশেষে অনেক কাটখড়
পুড়িয়ে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব
উত্তাপন করা হয় এবং এতে ১৮৮ টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা
দিবস হিসেবে ঘোষনা দেওয়া হয়। ১৯৫২ সাল থেকে এই দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে পালন হয়ে
আসছিলো।
ভাষার জন্য নির্ভয়ে প্রাণ দিয়েছে বাঙ্গালি ছাড়া এমন জাতি
দ্বিতীয়টি নেই। বাঙালিদের উপর ভাষা আন্দোলনের এই সাহসীকতার প্রভাব পড়েছে ১৯৭১
সালের যুদ্ধের সময়। ভাষার যুদ্ধে জয়লাভের পথ ধরেই মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার
যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলো বীর বাঙ্গালীরা। সালাম, রফিক, জব্বারদের রক্তের বিনিময়ে
আমাদের ভাষা যেমন মর্যাদা লাভ করেছে তেমনই আন্তর্জাতিকভাবেও অর্জন করেছে সম্মান।
তাই একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপন হওয়া শুধু বাংলাভাষারই বিশ্বজয় নয়,
পৃথিবীর সব মাতৃভাষার বিজয়।