কুকুর পালন করতে
চায় এমন অনেক মানুষ আমাদের চারপাশে আছে। গ্রামাঞ্চলে ব্যাপারটা সহজ হলেও শহরাঞ্চলে
বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ আশেপাশে অনেক প্রতিবেশীরা থাকেন যারা কুকুর পালন করা পছন্দ
করেন না। আর অন্যদেরও উসকে দিয়ে ঝামেলা তৈরী করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু অভ্যাস
যদি আপনার কুকরকে আয়ত্ব করিয়ে নিতে পারেন তাহলে বাসায় কুকুর পালন করা কঠিন কিছু
নয়।
অনুমতি নিন
কুকুর আনার আগে
অবশ্যই পরিবারের সবার মতামত নিন। পরিবারের সবাই যদি একমত না থাকেন তাহলে রাজি
করান। কারণ সবাই যদি সম্মতি না দেন তাহলে কুকুরটিকে বেশিদিন আপনি লালন পালন করতে
পারবেন না। আপনার প্রতিবেশীদের সাথে যদি ভালো সম্পর্ক থাকে তবে তাদের সাথেও শেয়ার
করতে পারেন এবং মতামত নিতে পারেন।
পরিচিত করান পরিবারের সাথে
নতুন কোনো স্থানে
গেলে মানুষের যেরকম মানসিক অবস্থা হয় তেমনি প্রানীদেরও একই অবস্থা হয়। তাই কুকুরকে
বাসায় আনার পর প্রথম কাজ হবে তাঁকে পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করানো। সবাই আদর
করলেই প্রানীটি দ্রুত সবার সাথে মিশে যেতে
পারবে। নতুন জায়গায় আসায় তার মধ্যে উত্তেজনা, আনন্দ কিংবা কিছুটা ভয়ও কাজ করতে পারে।
তাই তাঁকে স্বাভাবিক করার জন্য পরিবেশের সাথে পরিচিত করাটা জরুরি।
আচরণ লক্ষ্য করুন
সাধারন সব আচরন
যেমনঃ প্রজনন ছাড়াও আপনার কুকুরটির অন্য
কোনো বিশেষ আচরণ পরিলক্ষিত হয় কিনা খেয়াল রাখুন। যেমন মল-মূত্র ত্যাগের পূর্বে সে
বিশেষ কোনো আচরণ করতে পারে। তখন আপনার বুঝে নিতে হবে কুকুরটি কি চায়। কারণ তারা মানুষের
মতো মুখে বলতে পারেনা। কিছু কুকুরের প্রজাতি আছে যারা আকারে ছোট। আপনার কুকুরটি
যদি সেরকম কোনো প্রজাতির হয় তবে মনে রাখতে হবে তাদের ব্লাডার আকারে ছোট হয় তাই
তারা ঘন ঘন প্রস্রাব করে। এরকম কিছু কিছু আচরণ লক্ষ্য রাখতে হবে আপনাকে।
পটি ট্রেনিং
কুকুর পালনের আগে
সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি নিয়ে সবাই টেনশন করে সেটি হল পটি ট্রেনিং করানো। প্রথমেই
একটি স্থান নির্ধারন করে দিন যেখানে পটি করলে কোনো সমস্যা হবেনা। কুকুর নিজের
প্রস্রাবের গন্ধ মনে রাখে তাই একবার যেখানে প্রস্রাব করে সেখানে শুঁকে আবার চলে
আসে। তাই এমন জায়গায় তার পটির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কুকুরের জায়গাটি খুঁজে পেতে
সহজ হয়। পটি ট্রেনিং এর সময় অবশ্যই নজর রাখুন তার মুভমেন্টগুলোর উপর। নয়তো
সঠিকভাবে পটি ট্রেনিং নাও হতে পারে। খেয়াল করুন আপনার কুকুর ঘ্রাণ নিচ্ছে কিনা,
কোথাও আঁচড় কাটছে কিনা বা চক্কর করে ঘুরছে কিনা তাহলে বুঝবেন তার মলমূত্র ত্যাগের
সময় হয়েছে। তখনি তার জন্য নির্দিষ্ট করা স্থানে নিয়ে যান। এভাবে কয়েকদিন করলে সে
তার পটির জায়গা চিনে নিবে।
ভয় দেখাবেন না
কুকুরকে কখনো ভয় দেখাবেন
না। সে যদি ভুল জায়গায় পটি করে ফেলে বা কোনো জিনিস কামড়ে নষ্ট করে ফেলে তাহলে
তাঁকে কোনো ধরনের শাস্তি দিবেন না। বরং ভুল কিছু করতে দেখলে হাত তালি দিয়ে সরিয়ে
দিন অথবা মুখে “না, না” বা “নো, নো” বলে নিষেধ করুন। এমন কোনো শব্দ বা ইঙ্গিত ব্যবহার
করুন যাতে সে বুঝতে পারে। মনে রাখবেন কুকুরটি কিন্তু কিছু বুঝে শুনে করেনি। তাই
তাকে ভয় লাগাবেন না বা কঠিন কোনো শাস্তি দিবেন না, এতে করে সে আপনাকে ভয় পেতে শুরু
করবে আর কথা শুনতে চাইবেনা। কোথাও ভুলে পটি করলে রাগ দেখাবেন না।পরবর্তিতে তার
মলমূত্রের বেগ আসলে সে আপনার থেকে দূরে পালাতে পারে। তাই ভয় দেখাবেন না, রাগ
দেখাবেন না।
নির্দিষ্ট শব্দের সাথে পরিচয় করান
পটি ট্রেনিং সহ
আরো বিভিন্ন ছোটখাটো ব্যাপারগুলোকে আয়ত্ব করাতে নির্দিষ্ট কিছু শব্দের সাথে পরিচয়
করান। আস্তে আস্তে নির্দেশনা মতো উঠতে, বসতে বা দাঁড়াতেও শেখান। যে শব্দের মাধ্যমে
কুকুরটি যা বুঝে তাই সে কাজের জন্য বলুন। যেমন তার জন্য নির্ধারিত স্থানে পটি করতে
যাওয়ার জন্য যে শব্দ বা ইঙ্গিত ব্যবহার করেন তা অন্য কিছু করার সময় ব্যবহার করবেন
না। এতে করে তার মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশংসা করুন
নির্দেশনা মানলেই
প্রশংসা করুন। প্রশিক্ষনের সময়টিতে কুকুরটি যখনি আপনার নির্দেশ মানবে তখনই তার
প্রশংসা করুন চাইলে পুরস্কৃতও করতে পারেন ছোট বিস্কুট খেতে দিয়ে।আর কিছুদিন টানা
প্রশংসা করলে সে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং আপনার সাথে তার আবেগের সম্পর্ক তৈরী হবে।
পরিষ্কার রাখুন
আপনার কুকুরের
থাকার জায়গাটি , খাবারের পাত্র, পানির পাত্র ও পটির জায়গা ও বক্স বা যেখানে পটি
করে সেটি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। আর ভুলে যদি কোনো স্থানে পটি করে দেয় বা
প্রস্রাব করে দেয় তাহলে সাথে সাথে পরিষ্কার করে ফেলুন। কারণ কুকুরের প্রস্রাবে
থাকা অতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার করা গন্ধের কারনে সে শুঁকে শুঁকে আবার সেখানে প্রস্রাব
বা পটি করতে আসবে।তাই ভুলে কিছু করলে তা ধুয়ে – মুছে পরিষ্কার করে দিন।
ধৈর্য্য ধরুন
কুকুরকে ট্রেনিং
দেওয়ার ব্যাপারটা বেশ সময়সাধ্যও বটে। সহজে ধৈর্য্য হারালে চলবেনা। প্রথম প্রথম
কষ্ট হবে কিন্তু কিছুদিন একাগ্রতার সাথে অভ্যাস করালে একসময় আপনার আর কষ্ট হবেনা।
আরও
আরো কিছু ছোটখাটো
ব্যাপার আছে যেগুলো মনে রাখা আবশ্যক। কুকুর যেখানে সেখানে মুখ দিয়ে ফেলে কারণ এরা
বুঝেনা। তাই বাসার কোথাও বিষাক্ত কিছু রাখবেন না। যেমনঃ ইঁদুর বা তেলাপোকার বিষ।
যদি কয়েকদিনের জন্য কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করেন আর তাকে সাথে নেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে বিশ্বস্ত ও নিরাপদ কোনো জায়গায় রেখে যাবেন
যেখানে সে মোটেও বিরক্ত হবেনা।
উপরের বিষয়গুলো মনে রাখলেই কুকুর পালন করা নিয়ে আর কোনো চিন্তা থাকবেনা।