ঘর হলো একজন
মানুষের আশ্রয়স্থল যেখানে সারাদিনের ক্লান্তি শেষে মন-শরীর দুটোকেই ভালো রাখার
জন্য বাস করে। চারটি খুঁটি বা পিলার এর সাথে চালা আটকে দিলেই ঘর হয়না। ঘর মানে
শান্তির জায়গা। লক্ষ কোটি টাকার জিনিসপত্র থাকলেই ঘর সুন্দর হয়না। কমদামী জিনিস
দিয়ে সাজানো পরিপাটি ঘরও মনকে ভালো করে দেয়। অর্থাৎ বড় হোক বা ছোট , দামী হোক বা
সস্তা – ঘরটি সাজানো হতে হবে।পরিপাটি হতে হবে। অনেকের অর্থ থাকে কিন্তু সাজানোর
মতো মন বা জ্ঞান থাকেনা। আবার অনেকের হয় বিপরীত অবস্থা। মন ভরে ঘর সাজাতে চান
কিন্তু অর্থের কারণে পারেনা। আর কিছু মানুষ থাকেন যারা ভাবেন কি হবে ঘর গুছানো
রেখে, কোনোভাবে থাকলেই হলো! অথচ মন মানসিকতা ,স্বাস্থ্য দুটো ভালো রাখতে পরিষ্কার –
পরিচ্ছন্ন থাকা ও বাস করার পরিবেশকে সুন্দর করে রাখাটা অবশ্যই জরুরী। তাই আপনাদের
জন্য আজ নিয়ে এলাম কম খরচে ঘর সাজানোর কিছু টিপস।
১) “পুনঃবিন্যাস”
বলে একটি শব্দ আছে। মনে করুন আপনি আপনার ঘরকে একভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। কিছুদিন পর
পর সেই বিন্যাসকে নতুন করে সাজান। খুব বেশি প্রয়োজন হলে ঘরের আসবাবপত্র পাল্টাতে পারেন। আর নয়তো যা আছে তা
দিয়েই নতুনভাবে গুছিয়ে নিন। এক আসবাব একি স্থানে বেশিদিন বসানো থাকলে ফ্লোরে দাগ
হয়ে যায়। এতে বাসার সৌন্দর্য নষ্ট হয়।তাই মাঝেমাঝে জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করা উচিত। বাসাকে
পুনঃবিন্যস্ত করতে নতুন আসবাবের দরকার হয়না। আপনার ইচ্ছা হলে আপনি অন্য রুমের সাথে
জিনিস পাল্টে নিতে পারেন। চাইলে নতুন শোপিস যুক্ত করতে পারেন।
২) আমাদের জীবনে
অনেক সুন্দর স্মৃতি থাকে। ছোটোবেলা থেকে বড়বেলার হাজার লাখো স্মৃতির মাঝে কিছু
কিছু মূহুর্ত থাকে ক্যামেরায় বন্দী। আর সেইসব স্মৃতিকে ফ্রেমে বাঁধিয়ে নিন।বসার
ঘরের দেওয়ালের এক পাশে সব ফ্রেমকে সাজিয়ে নিন সুন্দর ডিজাইন করে। ছবিগুলো আপনার
সুখস্মৃতি ফিরিয়ে দিবে আর সাথে আপনার ঘরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিবে অনেকটুকু।
৩) সবুজের সমারোহ
সবার মনকেই প্রফুল্ল করে। ঘরকেও সাজাতে পারেন সবুজ দিয়ে। যারা বাগান করতে পছন্দ
করেন তারা ছোট ছোট টব বা বোতলকে ব্যবহার করে মানিপ্ল্যান্ট, পাতাবাহার, ছোট বনসাই
দিয়ে সাজাতে পারেন ঘরের ভেতরের দেয়ালটা।
৪) একেক জন
মানুষের একেক রকম শখ থাকে। কেউ ডাকটিকেট জমায়, কেউ দেশ-বিদেশের টাকা বা নোট সংগ্রহ
করে, কেউ আছে নানা রকম পুরানো এন্টিক এর শোপিস কালেকশন করে। এই শখের সংগ্রহগুলোকে
আপনি ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করতে পারেন। মনে করুন, আপনার কাছে অনেক দেশের
ডাকটিকেট আছে। আপনি সব ডাকটিকেটকে একটি বোর্ডে বিন্যস্ত করে পুরোটা একটা ফ্রেমে
বাঁধাই করে নিন আর দেওয়ালে ঝুলিয়ে দিন। আপনার শখ অন্যকেও কিছু জানতে সাহায্য করবে
আর আপনার ব্যক্তিত্বে এটি একটি ভালো প্রভাব তৈরী করবে।
৫) বর্তমান সময়ের
একটি জনপ্রিয় জিনিস হলো নানা রকম ওয়াল স্টিকার। ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের স্টিকার এখন
দোকানে ও অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়। স্টিকার ছাড়াও এখন অনেকেই রঙ-তুলি দিয়ে এঁকেও
দেওয়ালে নানা কারুকার্য ফুটিয়ে তুলেন। বাচ্চাদের রুম, বেডরুম, ড্রয়িংরুম এক এক
রুমের জন্য এক এক রকম এর ডিজাইন বাছাই করতে হয়। স্টিকার লাগানো হোক বা দেওয়ালে
আঁকানো ডিজাইন বাছাই করার ক্ষেত্রে অবশ্যই রুচিবোধের কথা মাথায় রাখবেন।
৬) আয়না সবসময়
ড্রেসিং টেবিল হিসেবেই ঘরে থাকবে এমন নয়। বিভিন্ন আকারের আয়নাকে সুন্দরভাবে
দেওয়ালে সাজিয়ে নেওয়া যায় । ইউটিউবে এই ধরনের শো পিস বা হ্যান্ডিক্রাফটস তৈরীর
অনেক টিউটোরিয়াল আছে। আপনি চাইলে সেখান থেকে সাহায্য নিয়ে বাসায় বসে তৈরী করতে
পারেন।
৭) উইন্ডচাইম, দেয়ালে
ঝুলানো কাগজ, পাটসুতা, খড়ি ইত্যাদি দিয়ে নানা রকম ঘর সাজানোর জিনিসপত্র তৈরী করতে
পারেন। ফেলনা জিনিস দিয়েও এ ধরনের শোপিস তৈরী করা যায়। পরিবেশবান্ধব ও সহজে নষ্ট
না হয় মতো উপাদান নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবেন।
৮) অনেকের ধারণা
বেশি আসবাবপত্র দিয়ে সাজালেই বুঝি ঘরে সৌন্দর্য্য বাড়ে।না, এটা ভুল ধারণা। ঘরের
আসবাবপত্র দামী হোক বা না হোক, রুচিসম্পন্ন হতে হবে অবশ্যই। বড় গদিসম্পন্ন সোফা না
কিনে বেতের বা হালকা ডিজাইনের গাছের সোফা কিনুন। সেন্টার টি টেবিল কেনার সময় সোফার
ডিজাইন এর সাথে মিল রাখতে ভুলবেন না।
৯) কাপড় গুছিয়ে
রাখার জন্য বক্স বা ওয়্যারড্রোব ব্যবহার করুন। বাসাবাড়িতে কাপড় গুছিয়ে রাখার দিকেই
নজর দিতে হয় বেশি। পরিবারের সদস্যরা গুছানো মানসিকতার না হলে বিশেষতঃ এ ধরনের
সমস্যা হয়। তাই ধোয়ার আগের ও পরের কাপড়গুলোকে আলাদা আলাদাভাবে গুছিয়ে রাখুন। কাপড়
শুকানোর পর ভাজ করে আলনা বা ওয়্যারড্রোবে তুলে রাখুন। শোয়া ব্যতিত অন্য সময়ে বিছানার
কাঁথা বা কম্বল ভাঁজ করে রাখুন।
১০) রান্নাঘরে
হাড়ি-পাতিল, মশলাদানি, কাপ-প্লেট, থালা-চামচ সবকিছুকে গুছিয়ে রাখুন। এখন বাজারে
নানা রকম তৈজসপত্র গুছিয়ে রাখার সেলফ পাওয়া যায়। যদি আপনার বাজেট কম হয় তবে আপনি
স্টিল বা লোহার পরিবর্তে প্লাস্টিকের সেলফ ও কিনতে পারেন।
১১) কিছুদিন পর
পর লাইট, ফ্যান, সুইচবোর্ড এগুলো পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। প্রতিদিন ফ্রিজ, টিভি
এগুলো শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে দিন।
১২) ঘরের দরজায় ও
প্রতিটা বিছানার পাশে একটি করে পাপোশ রাখুন। যাতে সবাই পা মুছে প্রবেশ করে ও বিছানার
চাদরে ময়লা না হয়। পাপোশ ছিড়ে গেলে নতুন পালটে দিন।
ভাড়াবাসায় বাস
করা অনেকের ধারণা , পরের ঘর-বাড়িকে এত যত্ন করার কি দরকার! আবারতো সব ফেলে
অন্যখানে যেতে হবে। অথচ এটা চিন্তা করে দেখেনা কোনো স্থানে ছয় মাস থাকুক বা ছয় বছর,
থাকার জায়গা হতে হবে পরিষ্কার ও গুছানো। তাই আপনার নিজের ঘর হোক বা ভাড়াবাসা ,
সবসময় ঘরকে সুন্দর পরিপাটি করে রাখার চেষ্টা করবেন।