সহকর্মী – আমাদের সকলেরই
পরিচিত শব্দ। ছোট থেকে বড় সব ধরনের কর্মক্ষেত্রেই সহকর্মীরা থাকেন। সহকর্মীদের
সাথে সুসম্পর্ক তৈরী হওয়া মানে কর্মক্ষেত্রে সুন্দর কাজ করার পরিবেশ তৈরী হয়।
কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। আপনার সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক কতটা ভাল তা র উপর
আপনার ক্যারিয়ারে সফলতাও বেশ খানিকটা নির্ভর করে।
কথায় আছে – দশের লাঠি
একের বোঝা। কথাটার বিশ্লেষন আমরা সকলেই জানি। যে কাজ দশজনে সহজে করতে পারেন সে কাজ
একজন করতে চাইলে অনেক সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়। ঠিক একিভাবে আপনি আপনার কর্মস্থলে
যে কাজটি করছেন তাতে যদি আপনার সহকর্মীদের সাহায্য পান তবে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা
বেশি থাকে। নতুন কর্মস্থলে মানিয়ে নেওয়াটা খুব সহজ বিষয় নয়। নতুন একটা জায়গায় আসলে
অবশ্যই কিছুটা সময় লাগে স্থির হতে। কিন্তু পূর্বের যদি চাকরি করার অভিজ্ঞতা থাকে
তবে কিছু কিছু বিষয় হয়তো আপনার জানা থাকতে পারে। সারাদিনের একটি বড় অংশ আমরা ব্যয়
করি আমাদের কর্মস্থলে।
কিছু বিষয় মনে রাখলে
সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী হয়।
১)সবখানেই দায়িত্ববান
মানুষকে সবাই পছন্দ করে। আপনার প্রতিটা কাজ ও কথায় দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। তবেই কর্মস্থলের সবাই
আপনার সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী
হবে।
২) কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে
হয়ে যেতে পারে আড্ডা। তার মানে এই নয় যে কাজ জমা রেখে আপনি গল্পে মশগুল হবেন। না
তেমনটা নয়। ইতিবাচক যেকোনো বিষয় নিয়ে চাচক্রে আড্ডা জমতে পারে সহকর্মীদের সাথে।
হাসিখুশী সময় কাটালে কাজের প্রতি আগ্রহও বাড়ে আর একঘেয়েমি কাটে।
৩) তোষামোদ করবেন না
কারোর সাথেই। তবে প্রশংসা করতে ভুলবেন না। আপনার সহকর্মীর কাজ যদি ভাল লাগে তবে
সাথে সাথেই তার সুনাম করুন। কিভাবে কাজ করলে তার জন্য আরো ভালো হবে তাও সাজেস্ট
করুন।
৪) আপনার সহকর্মীদের সাথে
সহযোগীতামূলক মনোভাব রাখুন। তাদের সমস্যায় সাহায্যের হাত এগিয়ে দিন।
৫) একি ডিপার্টমেন্টে
যারা কাজ করেন তাদের সাথে টিমওয়ার্ক করুন। যাদের সাথে একি গ্রুপে কাজ করেন তাদের
সাথে ভালো সম্পর্ক রাখুন।
৬) টিমওয়ার্ক করলে যার
পারফরম্যান্স ভালো থাকে তাঁকে কৃতিত্ব দিতে একদম ভুলবেন না।
৭) একি সাথে সারাদিন কাজ
করলেও অনেক সময় দু-একজনের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক নাও গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু তার
মানে কিন্তু এই নয় যে তার সাথে আপনি রাগ
মনোভাবটা ফুটিয়ে তুলবেন। এমনটা কখনোই করবেন না। সরাসরি কারো প্রতি
বিরক্তভাব দেখালে আপনার ব্যক্তিত্বেও এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
৮) আপনার বস বা মালিক যদি
আপনার সামনে কোনো সহকর্মীর সুনাম করে, তার কাজকে অনুপ্রানিত করে তবে তার জন্য
ঈর্ষাবোধ করবেন না। সম্ভব হলে তার সেই কাজের দক্ষতা থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করুন।
৯) অন্য কারো সঙ্গে মিলে
কর্মস্থলে কোনো ধরনের পলিটিক্সে জড়ানোর চেষ্টা করবেন না। এটা বোকামী ছাড়া আর কিছুই
নয়। সবসময় সচেতন থাকবেন আপনার সরলতার বা ভালো হওয়ার সুযোগ যেন কেউ না নেয়।
১০) ছোটোবেলায় আমরা প্রথম
স্থান অধিকার করার জন্য প্রতিযোগিতা করতাম। কিন্তু কর্মস্থলে অন্য সহকর্মীর চেয়ে
ভালো করার জন্য কোনো ধরনের বাজে প্রতিযোগিতায় নামবেন না। এমন অনেকেই থাকেন যারা
নিজের কমতি কখনো স্বীকার করতে চান না , মূলত তারাই এ ধরনের ভুল পদক্ষেপ নেয়ার
সম্ভাবনা থাকে।
১১) অনেকেই আছেন নিজের
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কথাবার্তা নিয়ে
আলোচনায় বসে পড়েন। বেমালুম ভুলে যান যে অফিসের পরিবেশটা আলাদা।এ ভুলটি করবেন না।
১২) আপনার সহকর্মীদের
মধ্যে কেউ যদি কোনো তথ্য চেয়ে সাহায্য চান তবে অবশ্যই তাঁকে সঠিক তথ্য দিয়ে
সাহায্য করুন। কোনো ধরনের ভুল তথ্য দিয়ে নার্ভাস করার বা ভয় দেখানোর চেষ্টা করবেন
না।
১৩) আপনার ব্যক্তিগত
চিন্তার প্রভাব কখনোই আপনার কর্মস্থলের কারো উপর পড়তে দিবেন না। আপনি যতই মানসিক
চাপে থাকুন না কেন তা আপনার সহকর্মীকে বুঝিয়ে বলুন কিন্তু কোনো প্রকার রাগ বা বাজে
ব্যবহার করবেন না। এতে করে আপনার সম্পর্কে সবার মনে একটা খারাপ চিন্তা আসতে পারে,
সম্পর্কও নষ্ট হতে পারে।
১৪) অনেকের ধারণা (বিশেষ
করে যারা বেসরকারী চাকরি করেন) ,”অফিসে সবার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে লাভ কি।
সারাজীবন তো আর এক অফিসেই সময় কাটাবো না “ । এটা আপনার সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারনা।
আপনার কর্মক্ষেত্র বদলে যেতে পারে সময়ের সাথে সাথে কিন্তু নেটওয়ার্ক বড় হবে।
অর্থাৎ আপনার স্থান বদলালেও ভাল সম্পর্কগুলো থেকে যাবে যা আপনাকে যেকোনো সময়
সাহায্য করতে পারে।
১৫) সহকর্মীদের জন্মদিন
এর মতো বিশেষ দিনগুলো জেনে রাখুন। সেই দিনগুলোতে তাদেরকে ছোট কোন উপহার দিন বা উইশ
করুন।
এসব ছাড়াও আরো অনেক
ছোটখাটো বিষয় আছে যেগুলো মনে রাখলে আপনার কর্মস্থলেও আপনি সুন্দর পরিবেশ খুঁজে
পাবেন এবং কাজে অগ্রগতি লাভ করবেন। ক্যারিয়ারকে সফল করতে এটি আপনাকে অনেকাংশে
সাহায্য করবে।