মাইগ্রেন - জেনে নিন কিছু প্রতিকার!

মাইগ্রেন - জেনে নিন কিছু প্রতিকার!

Clothing, Health and Beauty

মাইগ্রেন – অতি পরিচিত একটি শব্দ, একটি রোগের নাম। এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে যে এই সমস্যায় ভোগেন না। একটা জরিপ বলে, বিশ্বের প্রায় ১৫ শতাংশ  মানুষ মাইগ্রেনের মাথাব্যাথায় ভুগেন। চলুন আজ কিছুটা জেনে নিই এই রোগ সম্পর্কে।

 

মাইগ্রেন কী?

মাইগ্রেন মূলত এক প্রকার মাথাব্যাথা। মাথার এক পাশ থেকে শুরু হয়ে পুরো মাথায় এই ব্যাথা ছড়িয়ে যেতে পারে। মাথায় স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়।এই সময় বাহ্যিক কোনো শব্দ বা আলো দেখতে ভালো লাগেনা। মস্তিস্কের বাইরে থাকা ধমনীগুলো মাথাব্যাথার সাথে সাথে স্ফীত হয়ে যায়। মাথাব্যাথার সাথে সাথে বমি বমি ভাবও লাগতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব মাথাব্যাথাই কিন্তু মাইগ্রেনের কারণে হয়না। অনেক সময় মস্তিস্কের টিউমার, দৃষ্টিজনিত সমস্যা, বা অন্য কোনো কারণেও মাথাব্যাথা হতে পারে।

 

মাইগ্রেন কেন হয়?

মাইগ্রেন হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে যাদের মাইগ্রেন এর সমস্যা থাকে তাদের কড়া রোদ ও তীব্র ঠান্ডায় মাথাব্যাথা বেড়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করলে , বেশি সময় ধরে ফোনে কথা বলা ও মোবাইল ব্যবহার করে। নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে মাইগ্রেনের ব্যাথা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত চা- কফি পানের কারণে, অনিদ্রাজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম না করা, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ সেবন ইত্যাদি নানা কারণে এ রোগ বেড়ে যেতে পারে।মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো মাইগ্রেনের ব্যাথাকে বাড়িয়ে দেয় বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

 

মাইগ্রেন কাদের বেশি হয়?

মাইগ্রেন এর সমস্যা নারী – পুরুষ যেকারো হতে পারে। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের এ রোগ বেশি হতে দেখা যায়। এটি বংশগতভাবে বা অজ্ঞাত কোনো পারিপার্শ্বিক বা অভ্যাসগত সমস্যার কারণেও হয়ে থাকে।  

 

মাইগ্রেনের লক্ষণঃ

মাথাব্যাথা করছে মানেই কিন্তু তা মাইগ্রেন নয়। তবে মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু হলে তা তিন/চার ঘন্টা থেকে চব্বিশ ঘন্টার বেশি সময় পর্যন্তও স্থির হতে পারে। মাথাব্যাথার সময় বমি বমি ভাব লাগতে পারে। ব্যাথা অসহনীয় পর্যায়ে গেলে বমি হতে পারে।মাথার যেকোনো অংশ থেকেই এ ব্যাথা শুরু হতে পারে বিশেষ করে মাথার যেকোনো একপাশ থেকে।চোখের পেছনেও ব্যাথা হতে পারে। এইসময় অতিরিক্ত শব্দ বা আলোয় ব্যাথা আরো বেড়ে যেতে পারে।

 

মাইগ্রেনের প্রতিরোধে যেসব খাবার সাহায্য করেঃ

১) ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার মাইগ্রেন প্রতিরোধে সাহায্য করে।

২) বিভিন্ন রকমের ফলমূল বেশি করে খাওয়া উচিত। যেমন- খেজুর। এটি মাথাব্যাথা উপশম করে।

৩) সবুজ ও রঙীন শাকসবজি খেলে উপকার পাওয়া যায়।

৪) ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। যেমন ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।

৫) আদার রস ও আদার পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি মাইগ্রেন এর প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

যেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবেঃ

১) ঘন ঘন চা-কফি খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

২) কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই,  মাখন, টমেটো ও টক জাতীয় ফল বেশি পরিমাণে খাবেন না।

ব্যক্তিভেদে খাবারের তারতম্য হতে পারে, তাই এক্ষেত্রে নিজেকেই কিছুটা সচেতন হয়ে খেয়াল করতে হবে কি খেলে ব্যাথা বাড়ে বা কমে।

মাইগ্রেন থেকে রেহাই পেতে কিছু করণীয়ঃ

১) প্রখর রোদ ও তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে যথাসম্ভব।

২) খুব বেশি কিংবা খুব কম আলোতে কাজ না করা।

৩) প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে ঘুম যাওয়া। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। এর কম হলেও মস্তিস্কে চাপ পড়ে।

৪) মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু হলে প্রচুর পরিমানে পানি পান করা উচিত ও বিশ্রাম নেয়া উচিত। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা বা ঘুমালেও কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়।

৫) দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটার বা টিভির সামনে বসে না থাকা।

৬) তাৎক্ষনিক ও প্রতিরোধক ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল বা এনেসিস, নেপ্রসিনজাতীয় ওষুধের সঙ্গে অ্যান্টিইমেটিক সাত দিন বা এর কমবেশি খেতে পারেন। তবে বারবার ব্যাথা অনুভূত হলে ডাক্তারের শরনাপন্ন হোন।

 

মাথাব্যাথাজনিত সমস্যার জন্য আমরা নিউরোলজিস্টের কাছে চিকিৎসার  জন্য যাই। তবে তার আগে একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হওয়াটাও উচিত।