ক্যারিয়ার-একটি
ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ শব্দ! জীবনের যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, তার মধ্যে
ক্যারিয়ার গঠন করা একটি। জীবনধারণের জন্য কিছু করাটা প্রত্যেকের জন্যই দরকার।
প্রত্যেকেই চায় জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে, ভাল একটা জীবন পেতে। পড়ালেখা করার পাশাপাশি
একটা পথকে নিজের জন্য বেছে নিতে হয়, যে মাধ্যমে কাজ করলে নিজের মধ্যে প্রশান্তি
কাজ করবে।
আমরা ছোটবেলা থেকেই
মোটামুটি শিখে যাই যে একটা নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে আমাদের
জীবিকার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আমাদের পরিবার বা আমরা সবসময় পড়ালেখার উপর জোর দেই।কিন্তু কখনো কেউ এটা চিন্তা
করিনা যে জীবিকা মানেই শুধু বেঁচে থাকার জন্য টাকা আয় করা নয়।ক্যারিয়ার বিষয়টা কি
বা কিভাবে এগোলে একটি সফল ক্যারিয়ার গঠন করা যাবে তা আমরা কেউই কখনো চিন্তা করিনা
। কেউ এ ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান বা সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়েও আসেনা। বড় হতে হতে শুধু
চারপাশের মানুষের কাছে বিভিন্ন ধরনের পেশা সম্পর্কেই শুধু শুনে থাকি।
বেশিরভাগ মানুষই চাকরি
করাকে জীবিকা মনে করেন। তাই কি নিয়ে পড়ালেখা করতে চান বা যা নিয়ে পড়ছে তা কি আদৌ
উপভোগ করছে কিনা তা বুঝতে পারেনা অনেকেই। এক গবেষনায় দেখা গেছে নিন্ম আয়ের
দেশগুলোতে প্রায় ৮৯% মানুষই তাদের চাকরি নিয়ে খুশি নন। তারা চাকরি বদলাতে চান।চাকরি
বা ব্যবসা ছাড়াও আরো অনেক সম্মানজনক জীবিকা আছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। শুধু
বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখা নয় কিছু বিষয় আছে যা বিবেচনায় রাখলে ক্যারিয়ার নির্বাচন করা
সহজ হয়।
১) শেখার কোনো সময় হয়না।
যেকোনো পরিস্থিতিতে শেখার মানসিকতা থাকতে
হবে।
২) একজন ভালো শ্রোতা অনেক
কিছু শিখতে পারে। আপনার আশেপাশে থাকা বন্ধু, সহকর্মী এদের অভিজ্ঞতা ও উপদেশ থেকে
আপনি কিছু না কিছু অবশ্যই শিখবেন।
৩) কাজকে প্রাধান্য দিন। যে কাজটি আপনি বর্তমানে করছেন
তা মনোযোগ দিয়ে করুন। যেকোনো কাজ যদি আপনি নিজের মনের খুশিতে না করে বরং বাধ্য হয়ে করেন তা নিয়ে আপনি কখনো সফল
ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবেন না।তাই নিজের কাজকে ভালোবাসুন।
৪)অনেকেরই ধারণা থাকে যে,
একবার যে বিষয়ে আপনি ক্যারিয়ার গঠন করবেন বলে ভেবেছেন তাতে যদি আপনি সফল হতে না
পারেন তবে আপনার ক্যারিয়ার শেষ। এটা আসলে ভুল ধারনা। একজন মানুষ যে শুধু একটি
ক্ষেত্র থেকেই আয় করতে পারেন তা নয়। আপনি কোন কাজটিতে সফল হতে পারেন তা নির্ভর করে
আপনার মনের ইচ্ছার উপর।
৫)নিজের পছন্দমতো
ক্যারিয়ার গঠন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা বা কর্মহীন থাকাটা মোটেও ঠিক নয়। আয় করাটাও জরুরী। কোনো
একটা কাজ করতে থাকলেই আপনার দক্ষতা, জ্ঞান সম্পর্কে আপনার ধারণা হবে। তখন নিজেকে
গুছিয়ে নেয়া বা আরো সুগঠিত করতে সহজ হবে।
৬)ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,
শিক্ষক এসব ছাড়াও জীবনে আরো অনেক ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।বর্তমানে এসব
ছাড়াও অনেক অপ্রচলিত ক্যারিয়ার আছে। ফটোগ্রাফি, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ইভেন্ট
ম্যানেজমেন্ট, মেকআপ আর্টিস্ট, হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি পেশা এখন জনপ্রিয় ।
৭) প্রায়ই মানুষকে দেখা
যায় কিছুদিন পর পর নিজের কাজ নিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়েন। তাই যে কাজেই যোগ দেন না কেন
বা ক্যারিয়ার হিসেবে ঠিক করেন না কেন আগে চিন্তা করুন আপনি কাজটা করতে কতটা আনন্দ
পাবেন, উপভোগ করবেন। কারণ যে কাজে আনন্দ নাই সে কাজে বিরক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৮) দক্ষতা মানুষকে সফল
করে তোলে। নিজেকে যত বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবেন আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনি তত
দ্রুত সফল হতে পারবেন। কাজের পরিমাপ বাড়ান। নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার কাজে নিজেকে
সংযুক্ত করুন।
৯)আপনি যে কর্মক্ষেত্রকে
নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পছন্দ করেছেন সে ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদেরকে অনুসরণ করুন।
মেন্টর হিসেবে মানুন। তাদের করা কাজ বা শেয়ার করা অভিজ্ঞতাগুলোকে নিজের জীবনে কাজে
লাগানোর চেষ্টা করুন। আবার শুধু আপনার পছন্দের ফিল্ডে সফল কিন্তু অন্য ক্ষেত্র সম্পর্কে
কম জ্ঞান রাখে এমন কাউকে ফলো করবেন না। কারণ একের অধিক ক্ষেত্র নিয়ে যিনি জানেন আপনি তার কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে
পারবেন।
১০) যত বেশি সম্ভব
মানুষের সাথে মিশুন ও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন।বর্তমানে দেশের চাকরির বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে নেটওয়ার্ক যত বড় হয়
চাকরিতে বা ক্যারিয়ারে উন্নতি তত দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।
একটি দেশের মোট জনসংখ্যার
বড় একটি অংশের বেকার হওয়া বা নিজের চাকরি বা ক্যারিয়ার নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকাটা বেশ
চিন্তার ব্যাপার। শুরুটা হোক মাধ্যমিক থেকে। কারণ মাধ্যমিকে এসেই মোটামুটি
ছেলেমেয়েরা কিছু টা বুঝার ক্ষমতা রাখে যে সে কোন বিষয়ে বেশি আগ্রহ অনুভব করে।
ক্যারিয়ার বিষয়টিকে আমাদের গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত, কারণ জীবনে সফল হতে হলে
ক্যারিয়ার নিয়ে একটি স্ট্রং ডিসিশন নেয়াটা জরুরী।