সাইফুল ইসলাম একটি
স্বনামধন্য আইটি কোম্পানীতে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। আজ
অফিসে একটি ইন্টারভিউ নিতে হবে। নতুন জাভা ডেভেলপার পদের জন্য যোগ্য প্রার্থী
নির্বাচন করতে হবে। বেছে বেছে পঁচিশ জনের সিভি জমা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যার মধ্য
থেকে একজনকেই বেছে নেয়া হবে।
তিনি তাঁর কক্ষে এসে
বসলেন এবং সিভিগুলো সামনে টেনে বসলেন। একে একে প্রায় সবার সিভিতেই চোখ বুলালেন।
মোটামুটি সকলের বেশ ভালো স্কোর দেখতে পাচ্ছেন রেজাল্টে, কয়েকজন ব্যতীত। পিয়নকে
ডেকে বললেন যেনো প্রথমজনকে ডেকে নেন।
গত দেড় ঘন্টা যাবত তিনি ২২ জনের ইন্টারভিউ
নিলেন। যাদের কাউকেই তিনি সিলেক্ট করতে পারেন নি। তাদের প্রত্যেককেই তিনি প্রথম যে
প্রশ্নটি করেছেন তা ছিলো,” ওই সাদা বোর্ডটিতে কিছু লিখুন”। কেউ জিজ্ঞেস করেছে,
“স্যার, কি লিখবো?” কেউ নিজের ইচ্ছেমতো কোনো লাইন বা শব্দ লিখে যাচ্ছিলো। নিজের
পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ প্রার্থীই
তাদের সিভিতে লেখা “About” অংশটাই মুখস্থের মতো আওড়ে যাচ্ছিলেন। জাভা সম্পর্কিত কিছু
প্রশ্ন করলেন। কেউ কেউ মুখস্থ উত্তর দিলো। কয়েকজন নার্ভাস হয়ে কোনো উত্তরই দিতে
পারলোনা। বেশ হতাশ হলেন সাইফুল সাহেব। পিয়ন জানালো বাকি তিনজন অনুপস্থিত।
কফির মগটা হাতে নিয়ে বাইরের
দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলেন এদের মধ্যে কাকে নির্বাচন করা যায়। তখনই কক্ষে একজন
প্রবেশ করলো।
সাইফুল সাহেব বলে উঠলেন,
“আপনি কাকে চাইছেন? “
সে ক্ষমা চেয়ে উত্তর দিলো,”আমি ভেবেছি আপনি এখানে ইন্টারভিউ
নিচ্ছেন। দুঃখিত।“
সে চলে যেতে উদ্যত হতেই
সাইফুল সাহেব বললেন,”হ্যাঁ আপনি ঠিক কক্ষেই এসেছেন।“
ইশারায় মার্কার দেখিয়ে
তাকেও বললেন বোর্ডে কিছু লিখতে। ছেলেটি সাথে সাথে লিখলো “কিছু” । সাইফুল সাহেবের
কাছে ব্যাপারটি বেশ মজার লাগলো। ছেলেটিকে বসতে বলে তিনি তার চেয়ারে গিয়ে বসলেন।
তার সিভিটি খুঁজে নিলেন। শুভ্র চৌধুরী নাম তার।
এরপর তাকে নিজের সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করতেই সে খুব নিশ্চিন্ত হয়েই উত্তর দিলো,” আমার সিভিতে সব দেয়া আছে। যা
দেয়া নেই তা হলো আমি মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করি। “
সাইফুল সাহেবও এ কথায় হেসে উঠলেন। সাইফুল সাহেব বললেন,” আপনার
একাডেমিক স্কোর এত কম কেন?”
শুভ্র জানালো সে পড়া
মুখস্থ করে লিখে পাশ করা এই ব্যাপারটা ঠিক পছন্দ করে না। তার ভাষায়,শেখাতেই আনন্দ,
মুখস্থ করে রেকর্ড তো ডিভাইসেও করা যায়। আর এইজন্যই সে একাডেমিক পরীক্ষাগুলো শুধু
পাশ করার জন্যই দিয়েছে।
এরপর সাইফুল সাহেব জানতে
চাইলেন সে তার ভার্সিটিতে ফাইনাল প্রজেক্টটি কেন একা করেছিলো?
সে বললো,” আমি আমার
প্রজেক্ট নিয়ে সবটা অবগত ছিলাম। আর কয়েকজনকে আমি সবটা বুঝিয়ে বলেছিলাম আমরা যদি
কাজটা নিয়ে নির্দিষ্ট একটা পথে আগাই তবে প্রজেক্টটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব।
কিন্তু তারা কেউ আমার কথায় ভরসা করতে পারেনি।“
“আর তাই আপনি একাই প্রজেক্টটি শেষ করেছেন?” ,
সাইফুল সাহেব জানতে চাইলেন।
শুভ্র জানালো সে একাই শেষ করেছে যার জন্য তার
বাড়তি দুবছর সহ মোট ছয় বছর লেগেছে আর এ নিয়ে তার কোন আফসোস নেই। সাইফুল সাহেব তার confidence আর attitude দেখে বেশ উৎফুল্ল
বোধ করলেন। তবে শুভ্র বেশ ক্যাজুয়াল পোশাকেই এসেছে।
সাইফুল সাহেব তাকে
জানালেন যে যদি তাকে চাকরীটা দেন তবে তার পোশাক-পরিচ্ছদ ও চলাফেরায় পরিবর্তন আনতে
হবে।
শুভ্র হেসে বললো,” স্যার আপনার উপদেশের জন্য
ধন্যবাদ। তবে আমি হয়তো পারবোনা নিজেকে পরিবর্তন করতে।“
“ কেন আপনার কাছে কি
ক্যারিয়ার গুরুত্বপূর্ণ না?” এই প্রশ্নের উত্তরে সে জানালো,” নিজস্বতা বাদ দিয়ে
ক্যারিয়ার গড়ে তোলাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না।“
সাইফুল সাহেব তৃপ্তির হাসি হেসে শুভ্রর দিকে
হাতটি বাড়িয়ে দিলেন আর তাকে জানালেন তাকে চাকরিটি দেয়া হচ্ছে।
এটা শুধু একটি গল্প নয়।
এটা আমাদের চলমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে জানা
চাকরীপ্রার্থীদের চিত্র। গতবাঁধা নিয়মে পড়ালেখা করে মুখস্তবিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে
পাশ করা শিক্ষার্থীদের আসল পরীক্ষাটা হয় চাকরীর বাজারে এসে। যে যত ভালো সমস্যা
সমাধান করতে পারে চাকরীক্ষেত্রে তার টিকে থাকার সুযোগও বেশি থাকে।
সাইফুল ইসলাম সাহেব ও
শুভ্র চৌধুরীর গল্পটা পড়লে যে জিনিসটি স্পষ্ট হয় সেটি হল confidence আর attitude . শুভ্রর একাডেমিক
রেজাল্ট খুব বেশি ভালো না হলেও তার মধ্যে কাজ নিয়ে দৃঢ়তা ছিলো। সে তার কনফিডেন্স
লেভেলটা ধরে রেখেছিলো। যে মনোবল নিয়ে সে তার প্রজেক্ট শেষ করেছিলো তাই প্রমাণ করে
তার কাছে কাজ ও কাজের ফলাফলটা মূল্য রাখে আগে। জাভা ডেভেলপার পদে চাকরি করার জন্য
এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয়ত, তার কাছে নিজের
ব্যক্তিত্বও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেখানে যেপদেই চাকরি করেন না কেন আপনার
ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব দিতে কখনো ভুলবেন না। আপনার মনোবলের সাথে সাথে আপনার
ব্যক্তিত্বও হতে হবে দৃঢ়!
নিজেকে চাকরীর জন্য যখন
তৈরী করবেন তখন অবশ্যই আগে এ দুটি বিষয়কে মূল্যায়ন করবেন । অন্যান্য সব ভালো
দিককেও অবশ্যই আত্মঃস্থ করবেন । কারন attitude শব্দটাকে অনেকেই ভুলভাবে
বুঝেন। অনেকে মনে করেন মুখের উপর কিছু বলে দেয়া কিংবা সরাসরি উত্তর দেয়াটাই বুঝি
ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে। মোটেও তা নয়। এটি আপনার সম্পর্কে বিরুপ ধারনা তৈরী করতে
পারে মানুষের মনে।তাই আগে বুঝতে চেষ্টা করুন সঠিক অর্থে কোনটি আপনাকে
ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে গড়ে তুলে।