যোগব্যায়াম –
একটি পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো শাস্ত্রীয় কৌশল। ইতিহাসমতে, প্রাচীন ভারতীয় মুনি
ঋষিরা তাদের শরীর স্বাস্থ্যকে দীর্ঘদিন যাবত সুস্থ ও সবল রাখতে বিভিন্ন রকমের কৌশল
আয়ত্ব করতেন। আর সেই ব্যায়ামগুলোই ইয়োগা বা যোগব্যায়াম নামে পরিচিত। ‘ইয়োগা’ বা ‘যোগ’
শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘যৌবন’।
যোগব্যায়াম আর
শারীরিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ কিন্তু এক জিনিস নয়। শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি বা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জরা-বার্ধক্য থেকে মুক্তি ইত্যাদির মতো কাজে
যোগব্যায়াম এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হয় যদি তা নিয়মিত ধরে রাখা যায়। সুস্বাস্থ্যের
অধিকারী হতে চাইলে শারীরিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। স্ফীত মাংসপেশী
গঠনে সাহায্য করে শারীরিক ব্যায়াম। সুস্বাস্থ্য মানেই কিন্তু বিশাল শরীর নয়। শরীরে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকতে হবে। দীর্ঘসময় পর্যন্ত মেশিনের মাধ্যমে ব্যায়াম করার
ফলে অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয় হয় যা পরবর্তীতে শরীরে বিরুপ প্রভাব ফেলে।পেশীর অতিরিক্ত
সংকোচন – প্রসারণ এর ফলে শরীরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। আর এর ফলে শরীরের
নানা বিপাককার্যেও সমস্যা সৃষ্টি হতে থাকে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায়ও বাঁধা সৃষ্টি হতে
পারে। যোগব্যায়াম শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই না, রোগ
নিরাময়েও সাহায্য করে। যদিওবা যোগব্যায়ামের উৎপত্তি ভারত উপমহাদেশে হয়েছিলো কিন্তু
সারা বিশ্বেই এর এর চর্চা, বিকাশ ও জনপ্রিয়তা অনেক। মেডিটেশন, প্রাণায়াম, ইতিবাচক
চিন্তা করা, নিউরোবিক জিম, বিভিন্ন রকম যোগাসন এগুলোর সমন্বয়ে সম্পূর্ণ যোগব্যায়াম ও এর প্রয়োগ
একজন মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সজীব রাখে। যোগব্যায়াম হল এক ধরনের জীবনদর্শন।
শরীর ও মনকে সতেজ ও সুস্থ রাখতে যোগব্যায়ামের বিকল্প কিছু হতে পারেনা।বিশেষজ্ঞদের
মতে, ইয়োগা হচ্ছে দেহের স্নায়ুতন্ত্র আর পরিপাকযন্ত্রগুলোর কর্মক্ষমতাকে ঠিক রাখা।
জীবদেহের সকল যন্ত্রই কোষ দ্বারা গঠিত।
কোষের গঠন, পুষ্টি ও
স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য দরকার হয় নিয়মিত প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ এবং নালীহীন
গ্রন্থিসমূহের প্রয়োজনমতো রস-নিঃসরণ। অন্যদিকে চাই দেহের বিষাক্ত ও অসার পদার্থের
অপসারণ। কোষের গঠন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য দরকার প্রোটিন,
শর্করা ইত্যাদি নানাজাতীয়
খাদ্য ও অক্সিজেন। এই অক্সিজেন আমরা প্রায় সবটুকুই পাই প্রশ্বাসের মাধ্যমে। সুতরাং
দেহের পরিপাকতন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্র যদি সবল ও সক্রিয় না থাকে,
তাহলে দেহের কোষ,
তন্তু বা পেশী কিছুই
সুস্থ থাকতে পারে না।পরিপাক ক্রিয়া সক্রিয় রাখতে হলে পেট ও তলপেটের পেশীগুলোর
সঙ্কোচন ও প্রসারণ ক্ষমতা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন।ধ্যানাসন,
পদ্মাসন,
সিদ্ধাসন প্রভৃতি আসন
দ্বারা দেহে শারীরিক ব্যায়াম হয় না। কিন্তু দেহের ও মনের প্রভূত উপকার হয়। এইসব
আসনকালে দেহে পেশীর ক্রিয়া হয় না বললেও চলে। ফলে দেহে অতি সামান্য
কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ মন্থর হয়,
ফলে তারাও কিছুটা বিশ্রাম
পায়। মস্তিষ্ক ও দেহ ভারমুক্ত হয় ও বিশ্রাম পায়। মানসিক বিশ্রামে ও চিত্তশুদ্ধিতে
আসনগুলো অদ্বিতীয়। তাছাড়া এই সব আসনে পেটের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর রক্ত চলাচল করে।
ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ফিটনেস ছাড়াও আরো নানাভাবে
যোগব্যায়াম কাজে লাগে।
১) ফিটনেস ধরে
রাখে- ফিট থাকা মানেই কিন্তু শারীরিকভাবে স্ট্রং থাকা নয়। মন ও শরীর উভয় নিয়েই
শরীর। তাই ফিট থাকতে হলে দুটোকেই ভালো রাখতে হবে। যোগব্যায়াম আপনার শরীরকে রোগ থেকে
দূরে রাখে আর মনকে সতেজ রেখে ফিটনেস ধরে রাখে।
২) মানসিক চাপ
কমায় –সারাদিনের কাজের শেষে আমরা কম-বেশি সবাই কিছুটা কাহিল হয়ে পড়ি। কাজশেষে বারি
ফেরার পর ক্লান্ত লাগে । মনের উপরও এর প্রভাব পড়ে। আমাদের এই অবসাদ থেকে মুক্তি
দিতে পারে যোগাসন।
৩) রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায়- নিয়মিত যোগাভ্যাস আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
সাহায্য করে। চারদিকে এখন এত দূষণ যে সবসময় নানারকম জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ
করছে এবং ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের অভ্যন্তরীণ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকা দরকার। যোগাসন রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে টিস্যু এবং পেশিকে
শক্তি দেয়। শ্বেতকণিকাগুলোকে আরও উজ্জীবিত করে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
শ্বাস-প্রশ্বাসের টেকনিক এবং ধ্যানও এতে সাহায্য করে।
ওষুধ খেলেই রোগ
নিরাময় হয় না, সঙ্গে কিছু
নিয়ম-নিষেধও মানতে হয়। তেমনি শুধু যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস করলেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী
হওয়া যায় না, কিছু বিধিনিষেধ
মেনে চলতে হয় বৈ কি। নিয়মিত যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসে শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকে,
এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র
সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু সাথে চাই পরিমিত ও যতদূর সম্ভব নিয়মিত আহার,
বিশ্রাম,
সংযম,
নিয়মানুবর্তিতা,
আত্মবিশ্বাস,
অটুট মনোবল ও একাগ্রতা।