লাইফ স্টাইল – প্রাত্যহিক
জীবনকে চলমান থেকে আরো গোছানো ও পরিপাটি
করে তোলার চেষ্টা। আমরা কথায় কথায় অনেকেই
বলে ফেলি ‘ লাইফ স্টাইল চেইঞ্জ’ করার কথা। চলমান জীবনধারাকে, প্রাত্যহিক নানা
রুটিনে পরিবর্তন আনার নামই লাইফ স্টাইলের চেইঞ্জ ।
অনেকেই মনে করেন লাইফ
স্টাইল মানেই হয়ত বড়লোকি জীবনধারা বুঝায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটা এরকম নয়।
আমরা যেভাবে আমাদের জীবন অতিবাহিত করি সেই ধারাতেই কিছুটা আভিজাত্যের ভাব আনা
কিংবা ছোটখাটো নানা পরিবর্তনই হল লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আনা।
প্রথম পরিবর্তনটা দৈনিক
অভ্যাস থেকেই শুরু করতে পারেন। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েরা রাত
জেগে কাটায় আর দিনের বেলায় বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠে। ঘুমের দেরীর সাথে যুক্ত হয়
খাবারে অনিয়ম।আস্তে আস্তে পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। দৈনিক নানা কাজেও এর প্রভাব
পড়ে। অথচ এসবও কিন্তু লাইফ স্টাইলের অংশ। ঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুমাতে যাওয়া, পড়ালেখা
করা, বাকি কাজ করা- সবকিছুই সঠিক সময়ে সম্পাদন করা উচিত। অনেকের ধারণা পড়তে বসলেই
হলো, সময় নিয়ে বিবেচনা করার কিছু নেই। কিন্তু শারীরিক বিজ্ঞানের ভাষায় কিংবা সাধারন
বিচার বিবেচনার ভিত্তিতে আমরা সবাই জানি, রাতে একটানা ঘুমিয়ে উঠার পর সকালে যখন পড়তে
বসে তখন মন শান্ত থাকে আর ব্রেন থাকে ফ্রেশ। যার কারণে সকালে নাস্তা করার পর পড়তে
বসলে শরীরেও এনার্জি থাকে আর ব্রেন সজীব থাকায় পড়ায় মনোযোগ বসে। দুপুরের খাবারের
পর চাইলে কিছুক্ষন পড়া যায় আর নয়তো কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেয়া যায়।সন্ধ্যায় নাস্তা করে
আবার একটানা পড়ে রাতের ডিনারের পর ঘুমান। এভাবে প্রতিদিন রুটিন তৈরী করে পড়লে আপনি
যে ফলাফল পাবেন তা অবশ্যই যেকোনো সময়ে পড়ালেখা করে পাশ করা ফলাফলের তুলনায় ভাল
হবে। দিনের তুলনায় রাত হয় নিরব আর শান্তিপূর্ণ। অনেকে রাতকে তাই পড়ার জন্য কাজে লাগানোর
কথা ভাবে। সারারাত জেগে পড়ে, আর সারাদিন ঘুমায়। অথচ ঘুমের জন্য নিরব পরিবেশই
প্রয়োজন। তাই সঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুম , পড়ালেখা,অন্যান্য কাজ করা উচিত। সুন্দর একটি লাইফস্টাইলের শুরু হয় এভাবেই।
সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখলে
মাটির ঘরও অনেক সুন্দর হয়ে উঠে। ঘরের আসবাবপত্রে রাখুন রুচির ছাপ। খুব বেশি এবং বড়
আকারের দামী জিনিসপত্র দিয়ে ঘর সাজানো থাকা মানেই কিন্তু উন্নত লাইফ স্টাইল নয়।
কমদামী ও হাতে গোণা কয়েকটি আসবাব কে গুছিয়ে রাখতে জানলেও তা অনেক সুন্দর দেখায়। আসলে
উন্নত লাইফ স্টাইল মানে সুন্দর রুচির পরিচয় দেওয়া। আবাস এর সাথে সাথে পরিধানের
কাপড়েও আধুনিকতা ও আভিজাত্যের ছাপ রাখতে হবে।
ঘরোয়া তৈজসপত্র, পর্দা,
বিছানার চাদর, শোপিস ইত্যাদি নানা জিনিসগুলো কেনার সময় অবশ্যই আপনার বাসার ডিজাইন,
দেওয়ালের রঙ এগুলো মাথায় রাখুন।এমনকি
মেহমানকে খাবার পরিবেশন করার
পাত্রগুলোও যেনো রুচিসম্মত হয়। কোনো অনুষ্ঠানে বা আত্মীয়-স্বজনের কাছে বেড়াতে
যাওয়ার সময় স্থান ও সময় বিবেচনায় রেখে পোশাক পরিধান করুন। ভাল মানের উপহার প্রদান
করুন যেখানে দরকার। আপনার হয়তো মনে হতে পারে এসবের সাথে লাইফস্টাইলের কি সম্পর্ক!
সম্পর্ক একটাই। আপনার অর্থ বিত্ত কম হোক
বা বেশি কিন্তু আপনার রুচিবোধ, ব্যবহার, চালচলন এসবই আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন
করে। এসব দিয়েই আপনার আশেপাশের মানুষ আপনার লাইফস্টাইল নিয়ে ধারনা করবে।
আরো কিছু ছোটোখাটো
ব্যাপার আছে যেগুলো আপনি চাইলে আপনার প্রাত্যহিক অভ্যাসের সাথে যোগ করে নিতে
পারেন।প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভালো কিছু নিয়ে চিন্তা করুন। এতে মন প্রফুল্ল হবে।
সারাদিন আপনার ভালো কাটবে। যেকোনো একটি সময় বেছে নিন প্রতিদিন পত্রিকায় চোখ বুলেনো
ও ইমেইল চেক করার জন্য। কাজ থেকে ফিরে সন্ধ্যায় কিছুক্ষন টিভি, কম্পিউটার, ট্যাব
নিয়ে বসতে পারেন। পাছন্দের গান শোনা, মুভি দেখা কিংবা মোটিভেশনাল স্পিচ শোনার কাজে
ব্যবহার করতে পারেন। রাতের খাবার শেষে কিছুক্ষন হাঁটুন। চাইলে খুব হালকা করে গান
শুনতে পারেন। তারপর ঘুমাতে যান।
মূলত কিছু নিত্যনৈমিত্তিক
অভ্যাস, চালচলন, ব্যবহারে কিছু ভালো পরিবর্তন আনুন । এটাই আপনার লাইফস্টাইল ।