২০১৯ সালের শেষদিক থেকে
শুরু করে এখনো পর্যন্ত মহামারী ’কোভিড-১৯’ কবলে জর্জরিত সারা পৃথিবী। করোনার
ভারতীয় বিশেষ ভ্যারিয়েন্টটি যখন প্রাণঘাতী হয়ে দেখা দিয়েছে তখন এর মধ্যেই ভারতে মরার
উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে তাড়া করছে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নামের রোগটি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে ‘ব্ল্যাক
ফাঙ্গাস’এ আক্রান্ত রোগী এবং মারাও গেছেন একজন।
আমরা সবাই জানি রোগটি বেশ
ভয়াবহ। কিন্তু এটি সম্পর্কে বিশেষ কোনো জ্ঞান না থাকায় অনেকেই হয়ে পড়ছেন আতংকিত। অথচ
রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকেই বেশি মূল্য দেয়া উচিত, সচেতনতা বৃদ্ধি করা
উচিত। চলুন জেনে নিই কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মূলত
একটি ছত্রাকজনিত রোগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি মিউকরমাইকোসিস নামেও পরিচিত। এই ফাঙ্গাস বা
ছত্রাকটি মূলত সর্বত্র বিরাজমান। মাটি, গাছপালা, সার বা পচনশীল ফল ও সবজির মধ্যে এটি থাকতে পারে। বেশি সময়
ধরে ফেলে রাখা জুতা থেকে শুরু করে রুটিতেও এই ছত্রাক জন্মাতে পারে। এই ছত্রাকটি
মোটেও বিরল কিছু নয়।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণঃ
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ
সম্পর্কে চিকিৎসরা জানান, এটি চোখে সংক্রমণ ঘটালে আক্রান্তের নাক বন্ধ হয়ে যায়,
নাকে ঘা হয়ে রক্তক্ষরণ হয়,
রোগী চোখে ঝাপসা দেখে
অর্থাৎ দৃষ্টি শক্তি কমে আসে, চোখের ভেতর থেকে রক্তক্ষরণ হয়,
চোখ জ্বালা পোড়া করে,
কারো কারো মুখের একদিকে
ফুলে যায়, নাক অথবা দাঁতের
মাড়ি কালো হয়ে যায়, এক পর্যায়ে কফের সঙ্গে রক্ত যায়,
রক্ত বমি হয়,
মাথা ব্যথা,
দাঁতে ব্যথা ও ঘাড়ে ব্যথা
শুরু হয়। ত্বকে কালো দাগ দেখা দেয়।এছাড়া নতুন করে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটে।
ফুসফুসের অক্সিজেন ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায় রোগীর। যার ফলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কীভাবে
মানুষকে আক্রান্ত করে?
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস
ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী,
স্বাস্থ্যগত জটিল সমস্যায়
থাকা ব্যক্তি বা চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহারের ফলে প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া ব্যক্তিদের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রকৃতিতে থাকা এ ছত্রাক নাক দিয়ে শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে সাইনাসে
এবং ফুসফুসে ঢুকতে পারে। প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকা ব্যক্তির শরীরের কাটাছেঁড়া জায়গা,
পোড়া জায়গা বা চর্মের
কোনো ক্ষত থাকলে সেখানেও আক্রান্ত হতে পারে।
কাদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস
হওয়ার আশঙ্কা থাকে ?
যে মানুষগুলোর রোগ
প্রতিরোধক্ষমতা অনেক কম, তারা এতে আক্রান্ত হতে পারে। ক্যানসার,
এইডসে আক্রান্ত রোগীদের
এতে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার পর রেডিও থেরাপি বা কেমোথেরাপি
নিচ্ছে, তারা খুব ঝুঁকিতে
আছে। বংশ বা জন্মগতভাবে কেউ কেউ কম প্রতিরোধক্ষমতার অধিকারী। ঝুঁকি তাদেরও আছে।
তাদের জন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে করে প্রকৃতি থেকে না আসে। যেসব রোগী স্টেরয়েড পেয়েছে,
তাদের রোগ প্রতিরোধের
ক্ষমতা কম থাকে। তাদেরও সাবধানে থাকতে হবে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকি
কমানোর উপায়ঃ
মিউকরমাইকোসিস ছত্রাক আসে মূলত আমাদের পরিবেশ থেকে। তাই একে রোধ করা
কঠিন। এর কোনো টিকা নেই। যেসব মানুষের প্রতিরোধশক্তি কম,
তাদের জন্য কিছু পরামর্শ
আছে ঝুঁকি কমানোর। তবে এর মাধ্যমে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকা যাবে,
তা নয়।কিছু নিয়ম মেনে
চললে আমরা হয়তো এ রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারি।
কিছু বিষয় আছে যা সকলের
মেনে চলা আবশ্যক। যেমন- ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্মাণকাজ বা খননকাজ চলছে এমন
স্থানে যাওয়া যাবে না। যদি যেতেই হয় তবে এন নাইনটিফাইভ মাস্ক পরে যাওয়া উচিত।
বন্যা বা পানিতে ডুবে ছিল এমন স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে যাওয়া উচিত না। ধুলাবালি এড়িয়ে
চলতে হবে, এড়িয়ে চলতে হবে অপরিষ্কার
জায়গা। বাগানে, উঠানে বা বনের
মধ্যে ঘুরতে গেলে জুতা, ফুল প্যান্ট এবং ফুল স্লিভ শার্ট পরতে হবে। মাটি ধরতে হয়—এমন কাজের জন্য অবশ্যই গ্লাভস পরে থাকতে হবে।
চামড়ার মাধ্যমে যেন
সংক্রমণ না হয়, সে জন্য আক্রান্ত
স্থান পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষ করে এসব স্থানে যদি ধুলাবালি লাগে,
তবে অবশ্যই তা সাবান-পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
করোনা এবং ব্ল্যাক
ফাঙ্গাস সবকিছুর একমাত্র প্রতিকার হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। সকল স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলা।